আমাদের ১ টাকা ২ টাকা ও ৫ টাকার কয়েনের মতো এটিও একটি কয়েন কিন্তু এটা শুধু নামের ক্ষেত্রেই কয়েন কারন এই কয়েন টি ফিজিক্যালি দেখা যায় না, ধরা যায় না, ছোয়া যায় না বা আপনার ওয়ালেট বা পকেটে-ও রাখা যায় না, কিন্তু এই কয়েন দিয়েও আপনি চাইলে টাকা বা ডলারের মতো সবকিছুই কিনতে পারবেন যদি আপনার সেলার বিটকয়েন সাপোর্ট করে, আসলে বিটকয়েন হল এক প্রকার ভার্চুয়াল কারেন্সি। এটি আমাদের সাধারণ টাকার বা ডলারের মতই। যদিও বাংলাদেশে এখনও বিটকয়েন লেনদেন বৈধতা পায় নাই । বিটকয়েন বাজারে অনেক বছর যাবতই আছে। কিন্তু তারপরেও অনেকেই এই বিটকয়েন সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না তাই তাদের কে বিট কয়েন সম্পর্কেপরিস্কার ধারনা।

আসলে কি এই বিটকয়েন ?

খুব সহজে বললে, বিটকয়েন হলো ডিজিটাল কারেন্সি যা এনক্রিপশন লেয়ারের মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকে তাই এগুলোকে সাধারণত ক্রিপ্টোকারেন্সিও বলা হয়ে থাকে। আমরা যে টাকা বা ডলার দিয়ে কেনাবেচা করি তা প্রিন্ট করতে হয়, তৈরি করতে হয়। বিটকয়েনও তৈরি হয়। তবে নরমাল টাকার মত না। কারণ বিটকয়েন প্রিন্ট করতে হয় না। বিটকয়েন তৈরি হয় বিশাল বিশাল অঙ্ক সমাধান করার মাধ্যমে।বিটকয়েন মাইনিং এর মাধ্যমে  এখন অনেকে চিন্তা করছেন যে ভার্চুয়াল অর্থের মধ্যে অঙ্কের সমাধান কেন করা লাগবে। আমি এইগুলো সবই আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো ।

বিটকয়েনের প্রকারভেদ ?

“বিটকয়েনে অল্প ফি দিয়ে দ্রুত লেনদেন করা সম্ভব” -এটা হয়তো শুনে থাকবেন কিন্তু বর্তমানে বিটকয়েনের ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারনে নেটওয়ার্কে সমস্যা হচ্ছে। ফলে লেনদেনগুলো কনফার্ম হতে আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা লাগছে আর মাইনার ফি অনেক বেড়ে গেছে। কম ফি দিলে আপনার ট্রানজেকশন কনফার্ম হতে অনেক সময় লাগবে, অথবা হবেই না।
এই সমস্যা দূর করার জন্য মাইনাররা বিটকয়েনকে আপগ্রেড করে ১লা আগস্ট ২০১৭ হতে বিটকয়েন ২টি ভাগে বিভক্ত করেছে ,একটি আগের পুরনো বিটকয়েন আরেকটি বিটকয়েন ক্যাশ ১৩ নভেম্বর ২০১৭ এই বিটকয়েন ক্যাশ নেটওয়ার্ক আপগ্রেড করা হবে।

কীভাবে কাজ করে এই বিটকয়েন ?

পৃথিবীর সব অর্থ মানে টাকা , ডলার বা যে কোন মুদ্রাই হোক এর একটি নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আছে। এই কাজটি সাধারণত সরকার করে থাকে। কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন যে বিটকয়েন এর কোন এরকম সংস্থা নেই। বিটকয়েন পুরোটাই পাবলিক। কেউ বিটকয়েন কে নিয়ন্ত্রণ করে না। বিটকয়েন নিজেই নিজের কাজ করতে থাকে।
আপনার কাছে যখন বিটকয়েন থাকবে তখন এই বিটকয়েন আপনার ঘরে রাখা মূল্যবান জিনিস এর মতই কাজ করবে। কারণ আপনি যখন বিটকয়েন এর মালিক হবেন তখন আপনার কাছে একটি গোপন কোড থাকবে। ঐ কোডের ভিতরেই বিটকয়েন এর সব কিছু থাকে। অর্থাৎ কেউ যদি ঐ কোড পেয়ে যায় তাহলে সেই বিটকয়েন এর মালিক।
এই কোড অনেকে অনলাইন সার্ভিস যেমন-কয়েনবেস এ সংরক্ষণ করে। তবে যারা অনেক বেশি বিটকয়েন নিজে কার করে তারা সাধারণত এই কোড নিজের কাছে রাখে। নিজের কাছে রাখার  সময়ও সাবধান থাকতে হয় অনেক। কারণ কেই এই কোড পেয়ে গেলে এই বিটকয়েন ফেরত আনার কোন উপায় নেই।
তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার  বিটকয়েন দিয়ে কেউ কখন জালিয়াতি করতে পারবে না। কারণ বিটকয়েন এ কার কাছে কত বিটকয়েন আছে তা সবাই দেখতে পারে। কিন্তু এটা দেখতে পারলেও ঐ বিটকয়েন এর মালিক আসলে কে তা বের করা সম্ভব না। কারণ আমি আগেই বলেছি সেটি হল কার কাছে বিটকয়েন থাকলে তার কাছে শুধু মাত্র একটি সংখ্যা থাকে। তাই বিটকয়েন আদান প্রদান এর বিষয়টি সবাই দেখতে পারলেও ঐ বিটকয়েন এর মালিক আসলে কে তা বোঝা সম্ভব নয়।

বিটকয়েন নিয়ম-নীতি ও মূল্য নির্ধারন ।

আপনি জেনে অবাক হবে যে আজ ঠিক এই মুহুর্তে (02.11.17 1:52 PM ) সময় ১ বিটকয়েন এর দাম 6866.12 ডলার বা 570574.99 টাকা। কিছুদিন আগেও বিটকয়েন এর দাম এত ছিল না। কিন্তু অল্প কয়েক দিনে বিটকয়েন এর দাম প্রায় দুই গুন হয়ে গেছে। টাকা বা ডলার এর মত বিটকয়েন এর দামও প্রতি সেকেন্ডে পরিবর্তন হয়ে যায়।
যেহেতু বিটকয়েন কেউ নিয়ন্ত্রণ করে না তাই বিটকয়েন কিছু নিয়ম-নীতি মেনে চলে। এই নিয়মগুলো বিটকয়েন তৈরি করার সময় ঠিক করা হয়েছিল। আমরা যখন ব্যাংক এ আমাদের টাকা রাখি তখন ব্যাংক সেই টাকার সম পরিমাণ স্বর্ণ জমা রাখে। কিন্তু বিটকয়েন এর বেলায় সেটা ঘটে না। কারণ বিটকয়েন যেহেতু কেউ নিয়ন্ত্রণ করে নাই তাই বিটকয়েন এর ভ্যালু বিটকয়েন নিজেই।

বিটকয়েন কিভাবে তৈরি হয়?

বিটকয়েন কিভাবে তৈরি হয় সেটা বুঝার জন্য আগে বুঝতে হবে বিটকয়েন আসলে কিভাবে স্টোর করা হয়। প্রতিটি বিটকয়েন এর একটি করে ব্লকচেইন থাকে।  এর ব্লকচেইন এর তিনটি পার্ট আছে। একটি হল বিটকয়েন এর গোপন সংখ্যা। আরেকটি পার্ট হল কে বিটকয়েনটি কার থেকে কার কাছে গিয়েছে। এবং লাস্ট পার্ট হল একটি প্রাইভেট লগ ফাইল। এই লগ ফাইল দিয়ে বিটকয়েন এর আদান-প্রদান ভেরিফাই করা হয়।
যখন কেউ নিজের ওয়ালেট থেকে আরেকজনের ওয়ালেটে বিটকয়েন পাঠায় তখন বিটকয়েন নেটওয়ার্ক কে কাকে বিটকয়েন পাঠাল তার সবকিছু নিজের সার্ভারে জমা রাখে। কিন্তু যদি সিকিউরিটি ছাড়া এভাবে বিটকয়েন ট্রান্সফার করা হয় তাহলে যে কেউ বিটকয়েন দিয়ে জালিয়াতি করতে পারবে। তাই এই সমস্যার সমাধান হিসেবে যখনই কেউ কোন বিটকয়েন আদান প্রদান করে তখন সেই বিটকয়েনটি আসল কিনা তা ভেরিফাই করতে হয়। এবং এই ভেরিফাই করার কাজটি করে বিটকয়েন মাইনাররা।
বিটকয়েন যখন আদান প্রদান হয় তখন তা ব্লকচেইন এ গিয়ে যোগ হয়। আগেই বলেছি। তো এই আদান প্রদানটি বৈধ কিনা তা যাচাই করার জন্য ব্লকচেইন এর শেষে একটি হ্যাশ এর দরকার পরে। এবং এই হ্যাশ ছাড়া বিটকয়েন এর আদান প্রদান সম্ভব হয় না। তাই যখনই কেউ কাউকে বিটকয়েন পাঠায় তখন বিটকয়েন মাইনাররা নিজেদের শক্তিশালী কম্পিউটার ব্যবহার করে হ্যাশ তৈরি করে।
আর এই হ্যাশ তৈরি করতে অনেকগুলো তথ্যের প্রয়োজন। যেমন কে বিটকয়েন পাঠাল। কার কাছে বিটকয়েন গেল। এবং এই ব্লকচেইন এর আগের হ্যাশ টিরও প্রয়োজন পরে। এবং এই হ্যাশ তৈরি করতে যে ডাটা গুলো ব্যবহার করা হয় তার একটি সংখ্যা বা অক্ষর পরিবর্তন হলেই পুরো হ্যাশ পরিবর্তন হয়ে যায়। তাই কেউ যদি এই হ্যাশ পরিবর্তন করে বিটকয়েন জালিয়াতি করতে যায় সাথে সাথে সে ধরা পরে যাবে। কারণ প্রতিটি বিটকয়েন এর আগের হ্যাশ থাকে। তাই কেউ জালিয়াতি করে বিটকয়েন তৈরি করতে পারবে না।

নতুন বিটকয়েন কিভাবে তৈরি হয়?

আমি আগেই বলেছি বিটকয়েন মাইনাররা তাদের কম্পিউটার ব্যবহার করে বিটকয়েন  আদান-প্রদানের হ্যাশ তৈরি করে। এবং এই হ্যাশ তৈরি করতে অনেক অনেক বেশি প্রসেসিং পাওয়ার দরকার হয়। কারণ এই হ্যাশ কে নির্দিষ্ট ফরম্যাট এ হতে হয়। এবং এই হ্যাশ তৈরি করতে যে ডাটাগুলো লাগে তার মধ্যে একটি ডাটা আছে যেটি কম্পিউটারকে নিজে থেকে দিতে হয়।
এবং যেহেতু একটু হ্যাশ পুরো তৈরি না করে বুঝা যায় না হ্যাশটি ঠিক হয়েছে কিনা। তাই বিটকয়েন মাইনারদের কম্পিউটার এক সেকেন্ডে হাজার হাজার হ্যাশ তৈরি করতে থাকে। এবং দেখতে থাকে এই হ্যাশটি বিটকয়েন এর নেটওয়ার্ক এর প্রয়োজন মোতাবেক হয়েছে কিনা। এবং এই হ্যাশ বিটকয়েন এর নিয়ম মানে কিনা। যদি মানে তাহলে এই হ্যাশ গ্রহণ করা হয়। এবং এর উপহার হিসেবে মাইনারকে কিছু পরিমাণ বিটকয়েন দেয়া হয়।
বিটকয়েন নেটওয়ার্কে সর্বমোট ২১ মিলিয়ন বা ২১,০০০,০০০ টি বিটকয়েন সাপোর্ট করবে।সীমিত সাপ্লাই এর কারনে এই ডিজিটাল কারেন্সির একটা ভাল চাহিদা রয়েছে।প্রতি ১০ মিনিটে নতুন বিটকয়েন তার সিস্টেমে যোগ হয় যেটা মাইনারদেরকে পুরষ্কার হিসেবে দেওয়া হয়।এই পুরষ্কার বা Reward এর পরিমান আনুমানিক প্রতি চার বছর পর পর অর্ধেক হয়ে যায়। শুরুতে প্রতি ১০ মিনিটে ৫০টি নতুন বিটকয়েন নেটওয়ার্কে যোগ হত। এখন সেটা ১২.৫, বর্তমানে ১৬ মিলিয়ন বিটকয়েন বাজারে আছে।
এই গ্রাফ অনুযায়ী আনুমানিক ২১৪০ সালে সর্বশেষ বিটকয়েনটি আসবে, এরপর আর নতুন কোন বিটকয়েন নেটওয়ার্কে আসবে না।

ততদিন পর্যন্ত যদি বিটকয়েন থাকে তখন মাইনাররা শুধুমাত্র ট্রানজেকশন ফি থেকে আর্ন করবে।এই সীমিত সাপ্লাই এর কারনে বিটকয়েনের মূল্য সময়ের সাথে বাড়বে। সাধারনত ডলার, পাউন্ড, টাকা কোন দেশ ইচ্ছামত ছাপাতে পারে, যার ফলে সেই মূদ্রার দাম কমতে থাকে।

বিটকয়েন মাইনিং কি?


বিটকয়েন মাইনিং হলো সেই প্রক্রিয়া যার দ্বারা লেনদেন যাচাই করা হয় এবং পাবলিক লেজারে যুক্ত করা যা ব্লকচেইন নামে পরিচিত। এবং নতুন বিটকয়েন প্রকাশিত হওয়ার মাধ্যমেও তা যোগ করা হয়। যেকোনো কেউ ইন্টারনেটে উপযুক্ত হার্ডওয়্যার এর মাধ্যমে মাইনিং এ অংশগ্রহণ করতে পারেন। মাইনিং প্রক্রিয়ায় ব্লকে সর্বশেষ লেনদেন কম্পাইলিং করা হয় কঠিন কোনো পাজলের মাধ্যমে। অংশগ্রহনকারী পাজল সমাধান করতে পারলে পরবর্তী ব্লকে যায় এবং পুরস্কারের দাবি জানাতে পারে।
কয়েকমাস আগেই বিশ্বব্যাপী কম্পিউটারগুলোতে ওয়ানাক্রাই র‍্যানসমওয়্যার হামলা চালানো হ্যাকাররা বিটকয়েনে পেমেন্ট চান,এবং যেহেতু পরিচয় সম্পুর্ন গোপন রেখে লেন দেন করা যায় তাই ডার্ক ওয়েবের সব লেনদেন-ই বিটকয়েনের মাধ্যমে হয় কেননা এই অর্থ বিশ্বব্যাপী কোনো সরকারের পক্ষে ট্রেস করা সম্ভব নয়। এছাড়া আরও একটি কারণে বিটকয়েনে আগ্রহ বাড়ছে তা হলো- অতিসম্প্রতি বিটকয়েনের মূল্য আকাশচুম্বী হয়ে যাচ্ছে ।

বিটকয়েন মাইনার কারা?


আপনি নিজেও বিটকয়েন মাইনার হতে পারেন। সর্বপ্রথম যখন বিটকয়েন মাইন করা হয়েছিল তখন খুব কম ক্ষমতা সম্পন্ন একটি কম্পিউটার দিয়ে তা করা হয়েছিল। কিন্তু যত বেশি বিটকয়েন মাইন করা হচ্ছে বিটকয়েন মাইনিং তত বেশি কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
কারণ তখন হ্যাশ গুলো তৈরি করা আরো বেশি কঠিন হয়ে পরছে। তাই আগে একটি ল্যাপটপ দিয়ে মাইন করা গেলেও এখন অনেক ক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটার লাগে। এবং প্রসেসর এর চেয়ে গ্রাফিক্স কার্ড এই কাজ ভাল করতে পারে বলে। এখন সাধারণত গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করে বিটকয়েন মাইন করা হয়। আপনারা যদি বিট কয়েন মাইনি করে বিট কয়েন আয় করতে চান তবে আমাকে কমেন্ট করে জানান তাহলে আমি ,কিভাবে বিট কয়েন মািইনিং করতে হয় তা নিয়ে আরেকটি আর্টিকেল লিখবো যদিও এখন আপনার বাসার পিসি বা ল্যাপটপ দিয়ে বিটকয়েন মাইনিং অন্তত এখন সম্ভব না। এর জন্য এন্টারপ্রাইস লেভেলের হার্ডওয়্যার দরকার ।

বিটকয়েন কতোটা সুরক্ষিত?

বিটকয়েন আপনার পকেটে রাখা টাকার মতই সুরক্ষিত। কারণ বিটকয়েন এর সিকিউরিটি ভাঙ্গা অসম্ভব। তবে আপনি যদি আপনার গোপন সংখ্যাটি যদি কোন ওয়েবসাইট এ সংরক্ষণ করেন এবং সেই ওয়েবসাইট যদি হ্যাক হয়ে যায় তাহলে আপনার গোপন সংখ্যাটিও হ্যাকারদের হাতে চলে যাবে। তাই এই সংখ্যাটি নিজের কম্পিউটারে সেভ করে রাখা ভাল।
আর লেনদেনের সময় বিট কয়েন আরো বেশি সুরক্ষিত কারন যখন একটি লেনদেন সংগঠিত হয় একজন মাইনারের মাধ্যমে লেনদেনটি ভেরিফাই হয় । সে তার পিসি এবং ইন্টারনেট ইউজ করে তার লেজার আর আমার করা লেজারটা মিলিয়ে দেখবেন। যখন দেখবেন দুটি ঠিক আছে, আমি কোন ফ্রড করিনি, তখন সে এই লেজারটি এপ্রুভ করে দিবে। একে বলা হয় একটি কনফার্মেশন। এভাবে অন্তত ৬টি কনফার্মেশন এর পর লেনদেনটিকে বৈধ হিসাবে ধরা হয়। এতগুলো কনফার্মেশন না হলে, বিটকয়েনটি আবার আমার একাউন্টে ফেরত চলে আসবে।

বিটকয়েন কে নিয়ন্ত্রণ কে?

বিটকয়েন কেউ নিয়ন্ত্রণ করে না। যিনি বিটকয়েন বানিয়েছেন অর্থাৎ শাতোসি নাকামোটো তিনি বা তারাও (কারো কারো মতে শাতোসি নাকামোটো কোন ব্যাক্তির নাম নয় এটি একটি আই টি ব্যাংকিং টিম  ) বিটকয়েন নিয়ন্ত্রণ করেন না। কারণ বিটকয়েন এভাবেই তৈরি করা হয়েছে। তাই কেউ চাইলেই বিটকয়েন এর দাম কমিয়ে দিতে পারবে না বা বাড়িয়ে দিতে পারবে না। এবং বিটকয়েন এর কোন ফিজিক্যাল ভ্যালু নেই।
মানুষ বিটকয়েন দিয়ে কেনা বেচা করে কারণ যিনি বিটকয়েন কিনছেন তার বিটকয়েন এর উপর বিশ্বাস আছে এবং যিনি বিটকয়েন বেচতেছেন তারও বিটকয়েন এর উপর বিশ্বাস আছে। আবার যেহেতু কে কাকে বিটকয়েন পাঠালো তা বুঝা গেলো ব্যক্তিকে আলাদা করা যায় না তাই অনেকেই সিকিউরিটি এর জন্য বিটকয়েন ব্যবহার করেন।

বিটকয়েন বৈধ না অবৈধ:

বাংলাদেশ সহ আরো ৫ টি দেশে বিটকয়েন কে অবৈধ বলা হয়েছে দেশগুলো হলো ভিয়েতনাম, আইলেন্ড, বলিভিয়া, ইকোয়াডর, কিরগিজস্তান এবং বাংলাদেশ এই দেশগুলো মনে করে যে এটি একটি ধ্বংসাত্মক প্রযুক্তি এবং যেহেতু সব বিটকয়েন এক্সচেঞ্জ যা ব্যবহারকারীদের বেনামে ট্রেড করার অনুমতি দেয়, তাই, অবৈধ অর্থ আদান-প্রদান, মাদকদ্রব্য বিক্রয়, ট্যাক্স পরিশোধ থেকে নিজেকে লুকাতে, এবং আরও অবৈধ কার্যক্রমের জন্য বিটকয়েন ব্যাবহার হতে পারে তাই তারা বিট কয়েনকে বৈধতা দেয় না তবে ধিরে ধিরে অনেক দেশ-ই বিট কয়েনকে বৈধ বলে ঘোশনা করছে যেমন জাপান ও অস্ট্রেলিয়া বিট কয়েনকে বৈধ করে দিয়েছে এবং বিট কয়েনের উপর থেকে কর অপসারন করেছে ।

বিটকয়েনের ব্যাবহার

বিটকয়েন দিয়ে যেকোন কাজের জন্য লেনদেন করা যায়। এটা গ্লোবাল তাই পৃথিবীর যেকোন কারো সাথে আপনি লেনদেন করতে পারেন।সাধারণত এক দেশ থেকে অন্য দেশে টাকা পে করলে সময় লাগে, কারেন্সি কনভারসেশন করতে হয়, আর ব্যাংক ফি দিতে হয়। বিটকয়েনে কোন থার্ড পার্টি যেমন ব্যাংক এর দরকার নেই।বিটকয়েন ব্যাবহার করতে হলে আপনার একটা ওয়ালেট করতে হবে, যেটা আপনি অনলাইনে অথবা মোবাইল এপ ইনস্টল করে বানাতে পারবেন।আপনি ইচ্ছে করলে একটা বিটকয়েন এড্রেসও জেনারেট করতে পারেন।বিটকয়েন ইউজ করতে হলে কেবল একটা ওয়ালেট এড্রেস আর একটা পাসওয়ার্ড কি লাগবে।কেউ আপনাকে বিটকয়েন পাঠাতে চাইলে সে এই এড্রেসটা ইউজ করবে। (এই এড্রেসটা আপনি শেয়ার করতে পারবেন)
7f212uAgL6ZEmK2tf543vQ3KuAYQmd751ft
এরপর আপনি এই এড্রেস এর বিটকয়েন আরেকজনকে দিতে চাইলে/খরচ করতে চাইলে এই পাসওয়ার্ড কি ব্যাবহার করবেন। (এই পাসওয়ার্ডটা আপনি শেয়ার করবেন না!)
Kx5cbaDuwYuqmQEsm6JkBYWVZXUP3akkjt8Xq32Vr6ogjFoseNGX
বিটকয়েন হল Anonymous -অর্থাৎ নিজের সম্পর্কে কিছু না জানিয়ে আপনি অর্থ লেনদেন করতে পারছেন।আপনার এড্রেস দিয়ে যে কেউ দেখতে পারবে যে কতগুলো লেনদেন করা হয়েছে কিন্তু আপনার নাম, ঠিকানা কেউ জানতে পারবে না।বর্তমানে অনলাইন ছাড়াও ইউরোপ আমেরিকার অনেক দোকানে, কফি শপ, বারে বিটকয়েন দিয়ে আপনি কিছু কিনতে পারবেন। যতই মানুষ বিটকয়েন এর ব্যাপারে আগ্রহী হবে, ততই মানুষ এটা ব্যাবহার করতে থাকবে।
বিটকয়েনের দাম তার চাহিদা অনুযায়ী বাড়তে কমতে থাকে। আপনি ইচ্ছে করলে বিটকয়েনের একটা ভগ্নাংশ ব্যাবহার করতে পারেন।
যেমন ০.০০০০০০০১ (বিটকয়েনের ১ মিলিয়নের এক ভাগ) কে ১ সাতোশি Satoshi বলা হয়, যেটা বিটকয়েনের সর্বনিম্ন একক।
বিটকয়েনের দাম যদি আরো অনেক অনেক গুন বেড়ে যায় তাহলে এটাকে আরো দশমিকে ভাগ করা যাবে।



কিভাবে বিটকয়েন পাবেন?

বিভিন্ন ভাবে আপনি বিটকয়েন আর্ন করতে বা কিনতে পারেন  অনলাইনে ফ্রিল্যান্স কাজ করে বিটকয়েনে পেমেন্ট নিতে পারেন।আপনি ফ্রিতেও বিটকয়েন পেতে পারেন। কিছু ওয়েবসাইট আছে যাদেরকে Faucet বলা হয়। এরা ফ্রিতে বিটকয়েন দেয়। এরা সাধারণত খুব অল্প পরিমান বিটকয়েন/সাতোশি দেয়। বিনিময়ে ওরা তাদের ওয়েবসাইটে এড বসিয়ে ইনকাম করে।
আমি কয়েকটি ট্রাস্টেড ফ্রি বিটকয়েন সাইটের ঠিকানা দিচ্ছি (এগুলো আমার রেফারেল লিংক)
1 Moon Bitcoin II 2 BitFun II 3 Bonus Bitcoin II 4 Moon Litecoin II 5 Moon Dogecoin
6 CoinPot (মাইক্রো ওয়ালেট যেখানে আপনার আর্নিং জমা হবে)
এসকল সাইটে দিনে ২-৩ বার গিয়ে ফ্রিতে কিছু বিটকয়েন নিয়ে নিতে পারবেন এবং কিভাবে বিটকয়েন কাজ করে তার একটা হাতে কলমে অভিজ্ঞতা হয়ে যাবে।

বিটকয়েন সংরক্ষন

আপনি যদি আপনার বিটকয়েন কোন অনলাইন সাইট বা এক্সচেঞ্জে রাখেন তাহলে সেই সাইট হ্যাকিং হবার সম্ভাবনা আছে। এরকম আগেও হয়েছে আর এর ফলে আপনি সে বিটকয়েন গুলো আর ফেরত পাবেন না।আপনি যদি এক্সচেঞ্জ থেকে সেগুলো নিজের পিসি বা মোবাইল ওয়ালেটে রেখে দেন, তাহলেও পিসি/ফোন ফরম্যাট হলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।এজন্য ভাল হয় আপনার ওয়ালেট এর এড্রেস আর পাসওয়ার্ড কি কাগজে প্রিন্ট করে সেটা কোন নিরাপদ স্থানে রেখে দেওয়া।

বিটকয়েন এবং অন্যান্য কয়েন সম্পর্কে আমার ধারনা

বিটকয়েনের দেখাদেখি অনেক অল্টারনেটিভ কয়েন এসেছে। যাদের মধ্যে অনেকেই আরো ভাল ফিচার নিয়ে এসেছে। তাদের মধ্যে বর্তমানে ইথেরিয়াম Ethereum, লাইটকয়েন Litecoin, ড্যাশ Dash, ডজকয়েন Dogecoin উল্লেখযোগ্য।বিটকয়েন যেখানে ব্যার্থ সেখানে অন্যান্য কয়েনসমূহ ভাল করছে। যেমন নতুন জেনারেশনের ইথেরিয়াম (Etherum) কেবল মাত্র ডিজিটাল কারেন্সিই নয়, এটি একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফরমও।বর্তমানে ইথেরিয়ামকে আগামী দিনের বিটকয়েন ধারনা করা হচ্ছে।বিটকয়েনকে মানুষ ইন্টারনেট ও ইমেইলের সাথে তূলনা করছে। যত মানুষ এটা ব্যাবহার করবে, ততই এর মূল্য ও চাহিদা বাড়তে থাকবে।আমরা বর্তমানে সবাই ডিজিটাল কারেন্সির লেনদেন করছি যেমন, মাস্টারকার্ড, বিকাশ, পেপাল ইত্যাদি, তাহলে বিটকয়েন নয় কেন?
আমার মতে বিটকয়েন এবং অন্যান্য কয়েন সমূহ আরো বাড়বে তবে বিটকয়েনকে পার করে যাবে অন্যান্য আধুনিক কয়েনসমূহ যেমন ইথেরিয়াম, ড্যাশ আর লাইটকয়েন।বাজারে এখন ৯০০র ও বেশি ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে, যার মধ্যে হয়তো ২০টা টিকবে। ভবিষ্যতে যখন সবাই ডিজিটাল কয়েনে লেনদেন করবে, তখন আম জনতা বিটকয়েনকেই চিনবে, যেমন বর্তমানে ইন্টারনেট ওয়েবসাইট মানেই .COM

শেষ কথা

আর্টিকেলটি দির্ঘ সময় নিয়ে পরার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি বিটকয়েন সম্পর্কে আপনার এতক্ষণে ভাল ধারণা হয়ে গেছে। তারপরেও যদি কোন বিষয়ে না বুঝে থাকেন কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আমি আপনাদের তা বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব। আর আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করে আন্যদেরকেও বিটকয়েন সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিন। আজ এ পর্যন্তই সবাই ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন।